বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধার জমিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয় নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতিসহ চারজনের বিরুদ্ধে দলীয় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এ নির্মাণকাজ চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন শ্রমিক লীগের সহসভাপতি কাজী শাহাদাৎ হোসেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী তিন সহোদর রিন্টু, টিটু ও রিটু। ওই তিন সহোদর রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াস তালুকদারের ফুফাতো ভাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মৃত মোজাম্মেল হক খানের ওয়ারিশদের ভোগদখলে থাকা উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ছোট ডুমুরিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় ৫৪ শতাংশ জমি রয়েছে। গত ৪ আগস্ট ওই জমিতে উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি শাহাদাৎ হোসেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী রিন্টু, টিটু ও রিটু দোকানঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরের দিন মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের ছেলে মেজবাউল ইসলাম খান বাদী হয়ে অবৈধ দখল ও নির্মাণকাজের অভিযোগ এনে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট ওই জমিতে অবৈধ দখল ও নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধার ওই জমিতে দলীয় কার্যালয়ের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্তরা। এর আগে দখলকারীরা ওই জমিতে রাজিহার ইউনিয়ন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় নামের একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ছোট ডুমুরিয়া বাজার সংলগ্ন ওই জমি মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক পৈতৃক সূত্রে পেয়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর দুই ছেলে মেজবাউল হক খান ও তোফাজ্জেল হক খান ভোগদখল করে আসছেন। দখলদারিরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তাঁরা দলীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের ৫৪ শতাংশ জমির সামনের দিকে কাঠ দিয়ে চারটি দোকানঘরের নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে ঘরগুলোর অবকাঠামোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এর সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছবি সম্মিলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এতে লেখা রয়েছে রাজিহার ইউনিয়ন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়।
উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী নূর হোসেন পাইক জানান, হাল রেকর্ড ও কাগজপত্র অনুযায়ী ওই জমির মালিক মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক খান ও তাঁর ওয়ারিশরা।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক খানের ছেলে মেজবাউল হক খান অভিযোগ করে বলেন, ‘এটা আমাদের পৈতৃক জমি। কিন্তু হঠাৎ করে তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জমিটি দখল করে। তারা আদালতের নির্দেশনাও মানছে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি ও দখলদার কাজী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘একটা সময় এ জমি মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক খানের নামে ছিল। পরবর্তী সময়ে তা সরকারের খাসজমির তালিকায় চলে গেছে। আমরা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে এখানে মার্কেট ও দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করছি।’
এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানার ওসি (তদন্ত) আবুল খায়ের বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুনরায় কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়ে এসেছি।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শতরুপা তালুকদার বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কিভাবে নির্মাণকাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply